গত আর্টিকেলে আমরা রেসিস্টর সম্পর্কে জেনেছি। আমি বলেছিলাম রেসিস্টর অনেক ধরনের হয়, কিন্তু আমি শুধু স্থির রেসিস্টর সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কিন্ত এমন অনেক রেসিস্টর আছে যার মান স্থির নয় , বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার মান পরিবর্তিত হয়। এসব রেসিস্টর বিভিন্ন কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কয়েকটি বিশেষায়িত রেসিস্টর হল ভেরিএবল (Variable) রেসিস্টর, এলডিআর(LDR) ও থারমিস্টর(Thermistor)।
ভেরিএবল রেসিস্টর
ভেরিএবল রেসিস্টর হচ্ছে এক ধরনের পরিবর্তনশীল রেসিস্টেন্স যার রেসিস্টেন্স আমরা চাইলে বদলাতে পারি। ভেরিএবল রেসিস্টর মূলত দুই ধরনের, নরমাল ভেরিএবল রেসিস্টর ও পটেন্সিওমীটার (Potentiometer)। বাজারে সাধারণত পটেন্সিওমীটার বেশি পাওয়া যায় এবং পটেন্সিওমীটার দিয়ে আমরা সাধারণত নরমাল ভেরিএবল রেসিস্টরের কাজ চালাতে পারি। তাই ইলেক্ট্রনিক্স এর কাজে পটেন্সিওমীটার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। নরমাল ভেরিএবল রেসিস্টর ও পটেন্সিওমীটার এর মধ্যে ব্যবধান খুব সহজেই বোঝা যায়। নরমাল ভেরিএবল রেসিস্টর একটি দুই পিনের কম্পোনেন্ট আর পটেন্সিওমীটার হচ্ছে একটি তিন পিনের কম্পোনেন্ট।
ভেরিএবল রেসিস্টরের আরেক নাম হচ্ছে রিওস্টেট (Rheostat). ভেরিএবল রেসিস্টরে সাধারণত একটি স্লাইডার থাকে যা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিলে তার রেসিস্টেন্স কম বেশ হয়। নিচের ছবিতে দুইটা ভিন্নরকম ভেরিএবল রেসিস্টর দেখানো হয়েছে
ভেরিএবল রেসিস্টরের স্কেমেটিক সিম্বল হচ্ছে
নিচে ভিন্ন ধরনের পটেন্সিওমীটারের ছবি দেয়া হল
পটেন্সিওমীটারের স্কেমেটিক সিম্বল হচ্ছে
যদি আমরা পটেন্সিওমীটারের ভিতরের চিত্র দেখি, দেখব এটা দেখতে অনেকটা নিচের ছবির মত।
পটেন্সিওমীটারকে আমরা চিন্তা করতে পারি দুইটা রেসিস্টর হিসেবে যা কিনা একসাথে কানেক্টেড আছে।
যখনি পটেন্সিওমীটারের স্লাইডার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যাব, দেখব যে এক প্রান্তের রেসিস্টেন্স (R1) কমবে আর অন্য রেসিস্টেন্স (R2) বারবে কিন্তু টোটাল রেসিস্টেন্স (R1+R2) বদলাবে না।
পটেন্সিওমীটারকে যদি আমরা ভেরিএবল রেসিস্টর হিসেবে ব্যবহার করতে চাই তাইলে এক সাইডের দুইটা প্রান্ত ব্যবহার করলেই চলে।
পটেন্সিওমীটারের মোট রেসিস্টেন্স সাধারণত তার গায়ে লেখা থাকে, সেটা সেটা সাধারণ রেসিস্টরের মতই কোড আকারে লেখা থাকে।
এলডিআর
এলডিআর(LDR) হচ্ছে এক ধরনের আলোক সংবেদনশীল রেসিস্টর যার রেসিস্টেন্স আলোর পরিমানের উপর নির্ভর করে বদলায়। আলোর পরিমাণ বেশি হলে এর রেসিস্টেন্স কম থাকে আর আলো কমে গেলে রেসিস্টেন্স বেরে যায়। এলডিআর সাধারণত লাইট সেন্সর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিচে একটি এলডিআর এর ছবি দেওয়া হল। এলডিআরকে সাধারণত ফোটোরেসিস্টর বা ফোটোসেল হিসেবে ও ডাকা হয়। এলডিআর দিয়ে আমরা লাইটের উপর নির্ভরশীল অটোমেসনের কাজ কারতে পারব, যেমন রাস্থার স্ট্রিট লাইট অটোমেটিকেলি চালু ও বন্ধ করা যাবে। আশা করি আগামীতে এলডিআর নির্ভর কোন প্রোজেক্ট নিয়ে আলোচনা করতে পারব।
এলডিআর এর স্কেমেটিক সিম্বল হচ্ছে
থারমিস্টর
থারমিস্টর হচ্ছে এক ধরনের তাপ সংবেদনশীল রেসিস্টর, যার রেসিস্টেন্স তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। থারমিস্টর মুলত দুই ধরনের এনটিসি (NTC – Negative Temperature Coefficient) থারমিস্টর ও পিটিসি (PTC – Positive Temperature Coefficient) থারমিস্টর। এনটিসি থারমিস্টর এর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা যত বেশি হবে থারমিস্টরের রেসিস্টেন্স তত কম হবে। আর পিটিসি থারমিস্টর এর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা যত বেশি হবে থারমিস্টরের রেসিস্টেন্স তত বেশি হবে। বাজারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এনটিসি থারমিস্টর, এবং এটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত থারমিস্টর। এনটিসি থারমিস্টর সেমিকন্ডাক্টর মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হয় এবং বিভিন্ন রেটিং এর পাওয়া যায়। সাধারণত এনটিসি থারমিস্টর এর রেসিস্টেন্স রেটিং দেওয়া থাকে। রেটিং যে রেসিস্টেন্স দেওয়া থাকে তা সাধারনত ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেসিস্টেন্স এর পরিমাণ। নিচের ছবিতে দুই ধরনের থারমিস্টরের ছবি দেয়া হয়েছে।
এই দুই থারমিস্টর ই 10K থারমিস্টর। এই ধরনের থারমিস্টর দিয়ে আমরা যেকোনো রুম এর চারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা মাপতে পারব, কিন্তু কোন মানুষের শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য বা পানির তাপমাত্রা মাপার জন্য এরকম থারমিস্টর ব্যবহার করা আইডিয়াল নয়। সে জন্য ওয়াটারপ্রুফ (waterproof) থারমিস্টর প্রয়োজন। নিচের ছবিতে একটি ওয়াটারপ্রুফ (waterproof) থারমিস্টর এর ছবি দেয়া হল।
থারমিস্টর দিয়ে অনেক চমৎকার প্রোজেক্ট করা সম্ভব। থারমিস্টর দিয়ে যেমন পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা মাপা সম্ভব তা দিয়ে আমরা বিভিন্ন অটোমেশন এর কাজ করতে পারব যেমন তাপমাত্রা বেড়ে গেলে অটোমেটিকেলি ফ্যান চালু করা। ফ্রিজ ও এসি তে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করার জন্য সাধারণত থারমিস্টর ব্যবহার করা হয়। আশা করি থারমিস্টর নির্ভর কোন প্রোজেক্ট নিয়ে আগামীতে আলোচনা করতে পারব।
থারমিস্টরের স্কেমাটিক সিম্বল হচ্ছে
উপরের দুইটা ছবির একটিতে দেখা যাচ্ছে -t দেওয়া এই -t এর মানে এইটা এনটিসি থারমিস্টর। এটা পিটিসি হলে এখানে +t দেয়া থাকত।
এই আর্টিকেলের জন্য এতটুকুই আগামি আর্টিকেলে আমরা ক্যাপাসিটর ও ইন্ডাক্টর সম্পর্কে জানবো।