দুই দিন আগে ফেসবুকে হঠাৎ করে একটা নিউজ নজর কারল। নিউজের হেডলাইনটি ছিল হুবহু এই রকম “দেশসেরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” এর সাথে নিচে স্নিপেটে লেখা “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) নয়, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিংয়ে এবার প্রথম হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।” এই রকম একটি নিউজ দেখে প্রথমেই একটা খটকা লাগল।
যদিও আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, একটা বিষয় স্বীকার করতে কখনো দিধা বোধ করি না, বুয়েট এখনো বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় । এমন না যে আমার ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স আছে, যা সত্য তা বলতে হবে।
স্বভাবতই আমি নিউজটি দেখার জন্য ক্লিক করলাম। নিউজের দ্বিতীয় পেরাতেই ওয়েবমেট্রিক্সইনফোর ( http://www.webometrics.info ) নাম দেখাতে বুঝে গেলাম এই রেঙ্কিং এর কাহিনি। এবং সাথে সাথে নিজের রিপোর্টারকে দুই চারটা গালি দিয়ে নিউজ সাইটটি থেকে বেরিয়ে গেলাম। এইসব জিনিষ এখন নিত্যদিনের কাহিনি হয়ে গেছে। তিল কে তাল বানানো এখন আর কঠিন কিছু না। নিউজ পোর্টালগুলো চাইলেই যেকোনো জিনিষ ভেরিফিকেসন ছাড়াই ছাপিয়ে দিতে পারে।
ওয়েবমেট্রিক্সইনফো যে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাঙ্কিং করে এইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাঙ্কিং নিয়ে যারা একটু ঘাটাঘাটি করে তারা সবাইি ই জানে। ওয়েবমেট্রিক্স এর ফাইজলামি রাঙ্কিং নিয়ে চার বছর আগের এই আর্টিকেলটি (http://www.sachalayatan.com/ragib/34878 ) পড়লেই বাকি সবাই তা জানতে পারবেন । ওয়েবমেট্রিক্স এর নাম থেকেই বুঝা যায় তারা রাঙ্কিং করে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনালাইন প্রেসেন্সের অপর ভিত্তি করে। তাদের রাঙ্কিং এর মেথডলজি (http://www.webometrics.info/en/Methodology ) দেখলেই বুঝবেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাঙ্কিং কিভাবে করে। বেসিকেলি তারা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কত পেইজ আছে , বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কি পরিমাণ পিডিএফ বা অন্য ধরনের ফাইল আছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইটের লিঙ্ক বাইরের ওয়েবসাইটে কি পরিমাণ বেকলিঙ্ক আছে তা। তারা যে যে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে রাঙ্কিং করে তার একটি শুধু একাডেমিক কাজের সাথে রিলেটেড। তা হল বিভিন্ন জার্নালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের কি পরিমাণ পেপার পাবলিশ হয়েছে তা। তাও রাঙ্কিং কাজে এর ইমপ্যাক্ট মাত্র ১০ %। ত বেসিকেলি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভালো মতো এসএও (SEO) করলে তার রাঙ্কিং উপরের দিকে হবে।
ত এই নিউজ পড়ার পর আমি ভাবলাম এটা নিয়ে খামখা চিল্লা চিল্লি করে কোন লাভ নাই। এই রকম রিপরটিং নিয়ে চিল্লা চিল্লি করেও কোন লাভ নাই। এইসব হয়ে আসতেছে আর তা চলবেই। কিন্তু খারাপ লাগে যখন আমারই বন্ধুরা এই নিউজের লিঙ্ক ফেসবুকে শেয়ার করে লাফালাফি করে। এতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেপুটেশন কোথায় যাবে তা কি আমরা চিন্তা করছি?
কিন্তু আজাকে হঠাৎ ফেসবুকে আরেকটা নিউজ দেখলাম, “দেশসেরা হওয়ায় শাবিতে আনন্দ মিছিল”। সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছে আাবার আমাদের ভার্সিটির ভিসি স্যার। সেই মিছিলে আছে প্রচুর শিক্ষক ও ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাঙ্কিং এর নিউজ পরে যতটা না খারাপ লাগল তার থেকেও হাজারগুণ খারাপ লাগল এই ছবিটি দেখে। এটি নিয়ে আমি কি বলব আমি নিজেই বুঝতেছি না। আমাদের শিক্ষকদের কাছে আমার প্রশ্ন তারা কি জানেন না ওয়েবমেট্রিক্স এর রাঙ্কিং কি? নাকি জেনেও এইসব ভুতুরে রাঙ্কিংকে বাহবা দিচ্ছেন? এইসব নিউজ নিয়ে বাইরের মানুষ প্রশ্ন করলে আমরা কি জবাব দিব?
আশা করি আমাদের শিক্ষকরা আমার এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিবেন এবং সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাঙ্কিং সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করবেন।
বিঃদ্রঃ এই পোস্ট পড়ে যদি শিক্ষকরা অপমানবোধ করে থাকেন তাইলে আমি আগে থেকেই ক্ষমা চাইলাম।