আমাদের দেশে বিদ্যুৎ সঙ্কট প্রবল । এর জন্য কিন্তু আমাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু আমরা চাইলে এটাকে কিছু পরিমাণে লাঘব করতে পারি । আপনারা নিশ্চয়ই মনে মনে বলছেন ‘কীভাবে’? তাহলে পড়তে থাকুন।
আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ ব্যবহারে এতটা সাশ্রয়ী থাকিনা। আমরা মনে করি এটুকু বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে লাভ কি ? মনে করুন আপনি আপনার একটি রুম আলোকিত করতে ১০০ ওয়াট বাল্ব (অনেকেই আদর করে হলুদ বাতি বলে ) ব্যবহার করছেন। কিন্তু আপনি চাইলেই একটি ১৭ ওয়াট CFL (অনেকেই এনার্জি বাল্ব বলে ডাকে ) বাতি দিয়ে সেই কাজ সারতে পারেন। অনেকেই তা করেন না , কারন একটি ১০০ ওয়াট বাল্বের দাম ২৫ টাকা আর একটি ১৭ ওয়াট CFL এর দাম ২০০ টাকা। কিন্তু একটু ভালোভাবে চিন্তা করে দেখুন একটি ১০০ ওয়াট বাল্ব সারা মাস জ্বালালে আপনার বিল আসবে ৬০ টাকা আর একটি ১৭ ওয়াট CFL জ্বালালে বিল আসবে ১০ টাকা । এভাবে আপনার মাসে ৫০ টাকা সাশ্রয় হলে ৪ মাসে CFL এর দাম উঠে আসে । তাইলে সর্বশেষে আপনার ই লাভ হচ্ছে। একই ভাবে আপনি যদি আপনার বারান্দার বাতি, টিভি, ফ্রিজ এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সবসময় না জ্বালিয়ে শুধু সময় মতো জ্বালান আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেক কম আসবে এবং দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা লাঘবে আপনিও এগিয়ে আসলেন। আপনি যদি আপনার ফ্রিজ ২৪ ঘণ্টা না জ্বালিয়ে দিনে ৬–৭ ঘণ্টা চালু রাখেন আপনার খাবার দাবার ও নষ্ট হবে না উল্টা আপনার বিদ্যুৎ খরচ ১০০ ইউনিট এর বদলে আসবে ৩০ ইউনিট। সেই হিসেবে বিল কিন্তু ৩০০ টাকার বদলে ১০০ টাকা আসবে। আপনি রাতে ঘুমানোর সময় আপনার টিভি সেটটি রিমোট টিপে না বন্ধ করে সরাসরি বন্ধ করলে আপনার বিদ্যুৎ খরচ কিছু হলেও কি কম আসবে না ? আপনি আপনার ছোট রুম গুলোতে যদি ৪০ ওয়াট বাল্ব এর বদলে একটি ৯ ওয়াট CFL ব্যাবহার করেন তাহলে কি তেমন ক্ষতি হয়ে যাবে? হিসাব মতে আপনি যদি পরিমিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাহলে আপনার বিদ্যুৎ ব্যবহার অন্তত অর্ধেকে নেমে আসবে । সেই হিসেবে আপনার খরচ ও কিন্তু কম আসছে এবং সময়মত আপনারা বিদ্যুৎ পাবেন।তাই আমার পরামর্শ থাকবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে একটু হলেও সাশ্রয়ী হোন। বিদ্যুৎ ব্যবহারে পরামর্শ :
- সাধারণ বাতির বদলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী CFL ব্যবহার করুন।
- রুমের সাইজ অনুযায়ী বাতি ব্যবহার করুন (ছোট রুমে বড় বাতি ব্যাবহার করে কোন লাভ আছে কি?)
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ২৪ ঘণ্টা না জ্বালিয়ে পরিমিত জ্বালান।
- ঘরে এসি ব্যবহার করলে তাপমাত্রা দরকারের থেকে বেশি কমাবেন না (২৫ ডিগ্রির নিচে নামানো উচিৎ নয়।)
- যেকোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়ের সময় তার energy effeciency দেখে কিনুন।
- ফ্রিজ কমিয়ে রাখুন (অযথা ৫ বা ৬ এ না দিয়ে ২ এ রাখুন)।
- বাড়ি তৈরির সময় যথা সম্ভব খোলা জানালা রাখুন। জানালায় কাঠের বদলে গ্লাস ব্যবহার করুন।
- দিনের বেলা সূর্যের আলো ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। দিনের বেলা অযথা বিদ্যুৎ খরচ করার মানে নেই।
- কম্পিউটার কিছুক্ষণের জন্য ব্যবহার না করলে শাট ডাউন না করে স্লিপ দিয়ে রাখতে পারেন। কম্পিউটার চালু হবার সময় অনেক বিদ্যুৎ খরচ করে যা এভাবে আপনি চাইলে কমাতে পারেন।
আপনি যদি সাশ্রয়ী মনোভাব নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাহলে নিশ্চয়ই আমরা আমাদের চলমান বিদ্যুৎ সঙ্কটকে বিদায় জানাতে পারব।
আপনি হয়তো ভাবছেন আমি কেন এসব কথা বলছি। কারন আমি একজন তড়িৎ কৌশল বিভাগের ছাত্র । আমি বুঝি আমরা চাইলেই এক দিনে বা এক বছরে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে পারবনা । যা আমরা পারব তা হচ্ছে সাশ্রয়ের মাধমে বিদ্যুৎ অপচয় কমাতে।