রেসিস্টর (resistor/ রোধক) ইলেকট্রনিক সার্কিটে সবচেয়ে ব্যবহৃত কম্পোনেন্ট। রেসিস্টর সম্পর্কে আড়ও জানতে এই লিঙ্কের http://bn.wikipedia.org/wiki/রোধক আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। রেসিস্টরের ইলেক্ট্রিকেল সিম্বল বা চিহ্ন হল
অথবা
রেসিস্টর অনেক ধরনের হতে পারে। আমার এই আর্টিকেল সিরিজ যেহেতু বেসিক ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে, আমি ইলেক্ট্রনিক্স এর কাজের সাথে সম্পৃক্ত রেসিস্টরগুলো নিয়ে মূলত আলোচনা করব। এই আর্টিকেলে আমি শুধু স্থির রেসিস্টর সম্পর্কে আলোচনা করব। স্থির রেসিস্টর গঠন অনুযায়ী অনেক ধরনের হয়ে থাকে। ইলেক্ট্রনিক্স এর কাজে আমরা যে ধরনের স্থির রেসিস্টর বেশি ব্যবহার করি সেটা হল কার্বন রেসিস্টর যা দেখতে অনেকটা এরকম ।

Carbon Resistor
আরেক ধরনের রেসিস্টর যা অনেক ব্যবহৃত তা হল সিরামিক রেসিস্টর যা দেখতে অনেকটা এরকম ।

Ceramic Resistor
রেসিস্টরের মান (বা রেসিস্টেন্স) সাধারনত ওহমের এককে বুঝানো হয়। ওহম কে বেশিরভাগ যায়গায় তার সিম্বল Ω দিয়ে বুঝানো হয়। কিন্তু প্রয়োজন অনুসারে কিলোওহম(KΩ) বা মেগাওহম(MΩ) এর এককে ও বুঝানো হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে ১ কিলোওহম (KΩ ) সমান ১০০০(১০৩) ওহম (Ω ) আর ১ মেগাওহম (MΩ ) সমান ১০০০(১০৩) কিলোওহম (KΩ ) বা ১০০০০০০(১০৬) ওহম (Ω )
রেসিস্টরের মান বের করা
রেসিস্টর এর মান জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রেসিস্টর এর মান বের করার অনেক উপায় আছে। এর মধ্যে কালার কোড দেখে রেসিস্টরের মান বের করা সবচেয়ে প্রচলিত। যেসব রেসিস্টরে কালার কোড থাকে না সেই রেসিস্টরে সাধারনত একটি নম্বর লেখা থাকে যেটা থেকে রেসিস্টরের মান খুব সহজে বের করা যায়। রেসিস্টরের মান বের করার আরেকটি সহজ উপায় হল মাল্টিমিটার ব্যবহার করে রেসিস্টান্স বের করা। মাল্টিমিটার ব্যাবহার করে রেসিস্টরের মান বের করার একটি বিরাট সুবিধা হল এতে এক্স্যাক্ট মান বের করা সম্ভব। তবে এর একটি অসিবিধা হল এই মেথড একটু সময় সাপেক্ষ। কালার কোড বা নাম্বার দেখে রেসিস্টরের মান বের করার মূল সুবিধাটাই হল সময় অনেক কম লাগে। একবার দেখেই বলে দেয়া যায় রেসিস্টরের মান কত। তাই রেসিস্টরের মান বের করার সবগুলো নিয়ম জেনে রাখা ভালো।
নাম্বার দেখে রেসিস্টরের মান
কিছু রেসিস্টর আছে যার গায়ে রেসিস্টরের মান লেখা থাকে। যেসব রেসিস্টর সাইজে একটু বড় (সিরামিক পাওয়ার রেসিস্টর) তাদের গায়ে তাদের মান ও পাওয়ার রেটিং সরাসরি লেখা থাকে। কিন্তু যেসব রেসিস্টর সাইজে একটু ছোট (যেমন চিপ রেসিস্টর বা ভেরিএবল রেসিস্তর ও পটেনশিওমিটার) তাদের গায়ে রেসিস্টেন্স এর একটা কোড লেখা থাকে যা দেখে বলে দেওয়া যায় রেসিস্টরের মান কত।
যেসব রেসিস্টরের গায়ে তাদের অরিজিনাল রেসসিটেন্স লেখা থাকে তা দেখলেই বুঝা যায়। কারন মানের সাথে Ω সিম্বলটি থাকবে এবং তার পাওয়ার রেটিং বলে দেওয়া থাকবে।

4.7 ohm 10 watt Resistor
উধারনসরুপ বলা যাক একটা রেসিস্টর এর গায়ে লেখা আছে 10W4.7 ΩJ । এর মানে হল এই রেসিস্টরটি ১০ ওয়াট পাওয়ার নিতে পারে এবং এর রেসিস্টেন্স ৪.৭ ওহম। কিন্তু শেষের J দিয়ে কি বুঝানো হচ্ছে? শেষের অক্ষরটি বুঝায় তার টলারেন্স কত। টলারেন্স হল রেসিস্টরের গায়ে রেসিস্টেন্স যত লেখা আছে আর তার সত্যিকারের রেসেস্টেন্স এর মানে ব্যবধান। নিচের টেবিল্টটিতে টলারেন্স এর কিছু কমন মান দেওয়া হল। এই ক্ষেত্রে J মানে +-৫% । ত তার রেসিস্টেন্স এর মান হতে পারে ৪.৪৬৫ থেকে ৪.৯৩৫ ওহম ।
কোড | টলারেন্স |
A | ±০.০৫% |
B | ±০.১% |
C | ±০.২৫% |
D | ±০.৫% |
F | ±১% |
G | ±২% |
J | ±৫% |
K | ±১০% |
M | ±২০% |
এবং যেসব রেসিস্টরের গায়ে কোড লেখা থাকে তা দেখা বুঝা খুবি সহজ কারন তার গায়ে শুধু তিন সংখ্যার একটা নাম্বার লেখা থাকবে। এই তিন সংখ্যা দেখে বুঝা যাবে রেসিস্টরের মান কত। কখনো কখনো চার সংখ্যার ও নাম্বার থাকতে পারে। সাধারণত চিপ রেসিটর ও পাওয়ার রেসিস্টরে এইরকম কোড দেওয়া থাকে।
নিচের ছবিটিতে দেখানো হল কিভাবে সাধারণত রেসিস্টরের কোড দেয়া থাকে

রেসিস্টরের গায়ে কোড
নিচের ছবিটিতে একটা উদাহরন দেখানো হল

470 ohm Resistor code
যদি কোডে ৪ ডিজিট থাকে তাহলে প্রথম তিন ডিজিট ওহমিক মানের প্রথম তিনটি অংক প্রকাশ করবে এবং চতুর্থ ডিজিটটি গুণক হিসাবে ব্যবহৃত হবে। বাকী সকল নিয়ম একই। কখনো কখনও দ্বিতীয় সংখ্যাটির যায়গায় R দেয়া থাকে, সে ক্ষেত্রে এটি দশমিক বোঝায় ও তৃতীয় সংখ্যাটি গুনক এর পরিবর্তে দশমিক এর পরের সংখ্যা বোঝায়। নিচের ছবিতে একটি উদাহরন দেখানো হল

4.7 ohm resistor code
অনেক সময় শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টর পাওয়া যায় । এবং সে ক্ষেত্রে একটি H আকৃতির চিহ্ন দ্বারা শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টর বোঝানো হয়।

0 ohm resistor code
কালার কোড দেখে রেসিস্টরের মান
কালার কোড অনেকটা নাম্বার কোডের মতই, শুধু প্রতিটা নাম্বারের পরিবর্তে একটা কালার আছে। কালার কোডেড রেসিস্টর চার ও পাঁচ ব্যান্ডের হয়ে থাকে। নিচের ছবিতে একটা কালার কোডেড রেসিস্টর দেখানো হল।
এই রেসিস্টরে দেখা যাচ্ছে যে রেসিস্টরের এক প্রান্ত থেকে রঙগুলো কাছে এবং অন্য প্রান্ত থেকে দূরে। যে প্রান্ত থেকে রঙ কাছে, সেই প্রান্ত থেকে নাম্বার গননা শুরু করতে হবে। যদি চারটা রঙের লেয়ার থাকে তাইলে এটা চার ব্যান্ডের রেসিস্টর আর পাঁচটা লেয়ার থাকলে পাঁচ ব্যান্ডের রেসিস্টর। সর্বশেষ রঙটি দ্বারা টলারেন্স বুঝানো হয়। তাছাড়া প্রথম বাকি সবগুলা রঙ থেকে সংখ্যাতে রূপান্তর করলে আমরা রেসিস্টরের কোড পাব এবং তাতে করে রেসিস্টরের মান বের হয়ে যাবে। মাঝে মধ্যে ছয় ব্যান্ডের রেসিস্টর ও পাওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে ছয় নাম্বার কালার রেসিস্টরের টেম্পারেচার কএফিসিয়েন্ট(coefficient) বোঝানো হয়। চার ব্যান্ডের রেসিস্টরের ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যান্ড হল গুনক আর চতুর্থ ব্যান্ড হল তার টলারেন্স। আর পাঁচ ব্যান্ডের রেসিস্টরের ক্ষেত্রে চতুর্থ ব্যান্ড হল গুনক আর পাঁচ নাম্বার ব্যান্ড হল টলারেন্স।
নিচের টেবিলে রঙের সাথে ব্যান্ডের মান, গুনক, টলারেন্স ও Temperature coefficient দেয়া হল। এটা বলে নেয়া ভালো কখনো কখনও ছয় ব্যান্ডের রেসিস্টর পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে ছয় নাম্বার ব্যান্ডটি রেসিস্টরের Temperature coefficient বোঝায়।
কালার (রঙ) | ব্যান্ডের মান | গুনক | টলারেন্স | Temperature coefficient |
কালো | ০ | ১ | – | – |
বাদামী | ১ | ১০ | ±১% | ১০০ |
লাল | ২ | ১০০ | ±২% | ৫০ |
কমলা | ৩ | ১কিলো | – | ১৫ |
হলুদ | ৪ | ১০কিলো | – | ২৫ |
সবুজ | ৫ | ১০০কিলো | ±০.৫% | – |
নীল | ৬ | ১ মেগা | ±০.২৫% | – |
বেগুনী | ৭ | ১০ মেগা | ±০.১% | – |
ধসুর | ৮ | ±০.০৫% | – | – |
সাদা | ৯ | – | – | – |
সোনালি | – | ০.১ | ±৫% | – |
রুপালি | – | ০.০১ | ±১০% | – |
বর্ণহীন | – | ±২০% | – | – |
নিচের ছবিতে কালার কোড দেখে রেসিস্টেন্স বার করার পদ্ধতি দেখানো হল।

resistor colour code chart

68 ohm resistor
উপরের ছবিটিতে রেসিস্টরটি দেখলে আমরা দেখতে পারব এটি একটি চার ব্যান্ডের রেসিস্টর এবং এর প্রথম ব্যান্ড হল নিল এবং দ্বিতীয় ব্যান্ড ছাই বরনের। তৃতীয় ব্যান্ড কাল আর সর্বশেষ ব্যান্ড সোনালি। এ থেকে আমরা বলতে পারি এই রেসিস্টরের রেসিস্টেন্স হল ৬৮
X ১০০ = ৬৮ ওহম আর এর টলারেন্স হচ্ছে ৫%।
মাল্টিমিটার ব্যবহার করে রেসিস্টরের মান
মাল্টিমিটারের সাহায্যে আমরা খুব সহজেই যেকোনো রেসিস্টরের মান বের করতে পারি। আধুনিক বেশিরভাগ মাল্টিমিটারে রেসিস্টেন্স মাপার ব্যবস্থা থাকে। মাল্টিমিটারের সাহায্যে রেসিস্টেন্স বের করতে হলে মাল্টিমিটারের নব ঘুরিয়ে রেসিস্টেন্স মোডে নিয়ে দুটি প্রোব রেসিস্টরের দুই মাথায় ধরলে মাল্টিমিটার সেই রেসিস্টরের মান দেধাবে। এভাবে রেসিস্টরের মান বের করলে রেসিস্টরের মান বেশ একুরেট হয়। মাল্টিমিটার ব্যবহার করতে হলে নিচের ছবিতির মত কানেকশন দিলে রেসিস্টেন্স বের করা যাবে।

Measuring Resistance using Multimeter
এই আর্টিকেলের জন্য এতটুকুই আগামি আর্টিকেলে আমরা বিশেষায়িত রেসিস্টর সম্পর্কে জানবো।
বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ধন্যবাদ ভাই। চালিয়ে জান।
Pingback: Starting with building circuit – SHP's Courses for NEUB